আজকে আপনি ট্যুরিস্ট ভিসায় কিভাবে ঢাকা টু সুইডেন যাবেন এবং বিমান ভাড়া, ভিসা, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, হোটেল খরচ,ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়, ইউরোপে ঘুরতে যাবার জন্য সুইডেন কেমন হতে পারে ও দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা ও ভ্রমন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন।
ভিসাঃ
বাংলাদেশ থেকে সুইডেন যাওয়ার জন্য প্রথমে একটি বৈধ পাসপোর্ট ও শেনজেন ভিসার প্রয়োজন হবে, যা আপনাকে সুইডেনে প্রবেশের অনুমতি দেবে। ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য ঢাকার সুইডিশ দূতাবাস বা ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। সুইডেন এ সিঙ্গেল/মাল্টিপল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট / ইন্টারভিউ দিতে হবেনা। ভিসা আবেদন পত্রের সাথে আপনার পেশা সংক্রান্ত ডকুমেন্ট, কাভার লেটার এবং এসেট ভ্যলুয়েশন জমা দিবেন। এইসকল ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার জন্য গ্লোবার্ড থেকে আমরা আছি আপনার পাশে। সুইডেনের জন্য কাভার লেটার প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অনেকেই সাধারণ একটি কাভার লেটার লিখে থাকে। কিন্তু সেখানে যথেষ্ট তথ্য থাকেনা, আমরা আপনার সাথে আলোচনা করে নির্ধারণ করব আপনার কাভার লেটারে কি কি উল্লেখা থাকার প্রয়োজন আছে। সবার থেকে আলাদা কাভার লেটার আপনার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেরিয়ে দেবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ
১.পাসপোর্টঃ অবশ্যই নূন্যতম দুটি খালি পৃষ্ঠা থাকতে হবে। এবং সুইডেন দেশ থেকে ফেরার পর ৩ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে।
২.আগের সকল পাসপোর্টের বায়ো পেজের রঙিন ফটোকপি ।
৩.একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (৩৫মিমি/৪৫মিমি)
৪. ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট ।
৫.আর্থিক স্বচ্ছলতার সার্টিফিকেট ।
৬.নাগরিক সংক্রান্ত ডকুমেন্টসমুহ।
৭.যদি পরিবার অথবা বন্ধুর কাছে ভিজিট করেন (স্পন্সরশীপ সনদ )
৮. চাকুরজীবীর ক্ষেত্রে NOC লেটার, Salary স্লিপ ইত্যাদি।
৯. আপনি ব্যাবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স/ ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট, Visiting কার্ড ও প্রতিষ্ঠানের লেটারপ্যাড।
১০. TIN সার্টিফিকেট/ট্যাক্স রিটার্ন ইত্যাদি।
ঢাকা টু সুইডেন কিভাবে যাবেন এবং বিমান ভাড়াঃ
সুইডেনে যেতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ফ্লাইট নেই, তাই সাধারণত কাতার, তুরস্ক, বা আরব আমিরাতের মাধ্যমে এক বা দুইটি ট্রানজিটে যাত্রা করতে হবে। ঢাকা টু স্টকহোম পর্যন্ত বিমান ভাড়া ৭৮ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। ভ্রমনের ১ মাস আগে টিকেট কনফার্ম করার চেষ্টা করবেন তাহলে কম প্রাইসে ফ্লাইট টিকেট পাবেন। এয়ারলাইন্স এর উপর নির্ভর করে ঢাকা থেকে সুইডেনে যেতে সময় লাগবে প্রায় ১৫ ঘন্টার মতো। যাত্রার আগে সুইডেনের আবহাওয়া ও স্থানীয় নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ধারণা নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। সুইডেনে পৌঁছানোর পর স্থানীয় মুদ্রা সুইডিশ ক্রোনা (SEK) ব্যবহার করবেন এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন।
হোটেল খরচঃ
স্টকহোমের প্রায় সব স্টেশন ও সাবওয়ের কাছাকাছি ছোট বড় মিলিয়ে অনেক হোটেল রেস্তোরা রয়েছে। আপনার বাজেট অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন। গ্রেন্ডহোটেল, রাইভাল হোটেল, কলম্বাস হোটেল, হোটেল হেলস্টেন, নরডিক সী হোটেল, ক্লেরিয়ন হোটেল সাইন, রেক্স হোটেল সুইডেনের প্রায় সব হোটেলেই সুস্বাদু সুইডিশ খাবারই পরিবেশন করা হয়। তবে আপনি যদি দেশী মুখরোচক খাবার পছন্দ করেন তবে যে কোন বাঙালি হোটেলে আসতে পারেন। স্টকহোমে প্রায় ৬০ হতে ৭০ টি বাঙালি হোটেল রয়েছে। বাঙ্গলি হোটেল কিম্বা ফুটকোর্টগুলোয় লাঞ্চ ৭০ হতে ৮০ ক্রোণারের মধ্যেই পাওয়া যাবে।
ইউরোপ এর দেশ, শেঞ্জেন, ই-ইউ এবং পশ্চিমা দেশ এর মধ্যে পার্থক্যঃ
সুইডেন দেশটি ইউরোপে, এই দেশোটি শেঞ্জেন ভুক্ত দেশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে তারা যুক্ত আছে। পশ্চিমা এই দেশটি খুবই ঠান্ডা দেশ এবং জনাকীর্ণ। যাহোক পশ্চিমা দেশ বলতে সাধারণত আপনার দেশের পশ্চিমে অবস্থিত দেশকে বুঝায়। সেমতে, উপমহাদেশের মানুষ এরজন্য মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা এগুলোকে পশ্চিমা বিবেচনা করা যায়। কিন্তু জনগণের মধ্যে প্রচলিত পশ্চিমা দেশ হচ্ছে ইউরোপ এবং আমেরিকা। আর ইউরোপের মানুষ আমেরিকা কে পশ্চিমা বিবেচনা করে। আর ইউরোপ হচ্ছে মহাদেশের নাম। এইখানে অনেক দেশ আছে এবং এই দেশগুলোর মধ্যে কিছু ২৯ টি দেশ এখন শেঞ্জেনভুক্ত দেশ। শেঞ্জেনভুক্ত দেশোগুলো অবাধে বাণিজ্য করে থাকে এবং বর্ডার অতিক্রম করতে কোন ঝামেলা হয়না। এজন্য শেঞ্জেন এর যেকোন একটি দেশের ভিসা থাকলে আপনি অন্য যেকোন দেশে যেতে পারবেন। সুইডেন, নেদারল্যন্ডস, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী, রোমানিয়া, চেক-রিপাব্লিক, হাঙ্গেরি, মাল্টা, স্পেইন, সুইজারল্যন্ড ইত্যাদি দেশগুলো হচ্ছে শেঞ্জেনভুক দেশ। ইউরোপের সব দেশ শেঞ্জেন ভুক্ত নয়। তবে। আয়ারল্যন্ড, গ্রীস ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে আছে তবে শেঞ্জেনভুক্ত নয়। আর নরওয়ে, বসনিয়ে, সার্বিয়া,ম্যসিডোনিয়া, ইউক্রেন, রাশীয়া, তুর্কি ইত্যাদি দেশগুলো ইউরোপ মহাদেশে হলেও কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে নেই।
ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়ঃ
ভ্রমণে সময় বেশ তাৎপর্য বহন করে। বিভিন্ন দেশের ভৌগলিক অবস্থান ও আবহাওয়া অনুযায়ী ভ্রমণ সময়ের তারতম্য হতে পারে। সুইডেন ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য সময় যে কোন বছরের জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস। এই সময়ের আবহাওয়া আমাদের দেশের শীতকালের মত। দিনের দীর্ঘতা বেশী, সূর্য আকাশে থাকে অনেকক্ষণ। জুন-জুলাইয়ে দু’এক পশলা বৃষ্টি হতে পারে তবে তা কিছু নয়।
ইউরোপে ঘুরতে যাবার জন্য সুইডেন কেমন হতে পারে ও দর্শনীয় স্থানের বর্ণনাঃ
সুইডেন ইউরোপ মহাদেশের উত্তরে উত্তর সাগর এর মাঝে একটি দেশ। এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং শেঞ্জেনভুক্ত দেশ। সুইডেনে ঘুরতে যাবার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আকাশে আলোর বর্ণচ্ছটা দেখতে যাওয়া। ইংরেজীতে এটাকে অরোরা বলা হয়। এই আলোকে মেরুপ্রভা আবার উত্তরীয় আলো বা নর্দার্ন লাইট বলা হয়। সুর্য থেকে ঝড় উঠে পৃথিবীর এর স্থানটিতে এমনটি হয়। তুষারে ঢাকা সুইডেন, ফিনল্যন্ড জুড়ে এইযে লাপ্ল্যান এলাকা এইখানে থেকে এই নিদর্শণ উপভোগ করা সবচেয়ে মজা। মেরুপ্রভা দেখার সবচেয়ে উপযোগী দুটি মাস হচ্ছে মার্চ ও সেপ্টেম্বর এবং রাত ৯ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত হচ্ছে আদর্শ সময়।
সুইডেনে ভ্রমণের সময় আপনি স্টকহোমের প্রাচীন গামলা স্তান ঘুরে দেখতে পারেন, যা ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশ্রণ। এখান থেকে, আর্কটিক সার্কেলের দিকে যাত্রা করে অরোরা বোরিয়ালিসের মোহনীয় আলোক শো উপভোগ করতে পারেন। এছাড়া, সুইডেনের অসংখ্য হ্রদ ও বনে হাইকিং করতে পারেন এবং সুইডিশ খাবারের স্বাদ নিতে পারেন, বিশেষত ফিক্সা। জাদুঘর ও রাজপ্রাসাদও ঘুরে দেখার মতো জায়গা। আর অবশ্যই নোবেল প্রাইজ মিউজিয়ামে ঘুরে আসবেন। স্টল্কহোল্মসের সমুদ্র তটগুলোতে সময় কাটাবেন। প্রায় প্রতি বছর সব দেশের পর্যটকরা এই দেশে ভ্রমণ করতে যায় । আপনিও চাইলে এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।
গ্লোবার্ড ট্রাভেলের সাথে আপনার সুইডেন ভ্রমণ হবে আরও সহজ!
আশা করি ইউরোপ, শেঞ্জেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং সুইডেনের ভিসা সংক্রান্ত তথ্য আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে লিখে দিন। আমাদের ফেসবুক পেইজ লাইক দিয়ে আমাদেরকে মেসেজ করতে পারেন। আমাদের ওয়েবপেইজে গিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং ইমেইল করতে পারেন globirdtravel@gmail.com -এ । এছাড়া বিস্তারিত যেকোনো তথ্যের জন্য কল করুন +8801877444482 নম্বরে।
গ্লোবার্ড ট্রাভেল